উনি আবার কি জিতলেন?

৫ মে, ২০১১ I'm reading: উনি আবার কি জিতলেন?Tweet this!
২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের পরের দিনের কথা বারে রবিবার সপ্তাহের প্রথম দিন এমনিতেই ঢাকার রাস্তাগুলো অন্য দিনের চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে এই দিন কিন্ত এদিন ঢাকাকে দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন উন্মাদদের এক শহর হাজার হাজার মানুষ পাগলের মত কি সব বকতে বকতে বিমান বন্দরের দিকে যাচ্ছে কয়েক ঘন্টা ধরে রাস্তায় আটকে পরে আছে লাখ লাখ মানুষ আমিও তাদের একজন

একবার ভাবলাম বিশ্বকাপটা বাংলাদেশই জিতে ফেলেনিতো ! পরক্ষণেই মনে পড়ল আরে আমাদের সোনার ছেলেরা তো সেই প্রথম পর্বেই বিদায় নিয়েছে তাহলে আবার কি হল ! আমাদের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে কোন পুরস্কার টুরস্কার নিয়ে আসেননিতো? বেশ কিছুদিন আগে ভারত থেকে ফেরার পর ভয়াবহ এক রিসেপশান দেয়া হয়েছিল তাকে নাহ! আজকে মনে হয় উনি আসেননি সকালেই তো দেখলাম কোথায় যেন ভাষণ দিচ্ছেন

তাহলে? নতুন করে আবার কেউ নোবেল পুরস্কার পাননিতো! মনে হয় না আর, পেলেই কি ! ওসব পুরস্কারের কোনো দাম আছে নাকি এ দেশে যেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রীই এখনো পান নি ডক্টর ইউনুস তো নোবেল পেয়েছিলেন কিন্ত তিনি এমন কোনো রিসেপশান পেয়েছিলেন বলেতো শুনিনি

হঠাৎ কারো মুখে গালি শুনে আমার চিন্তায় বিঘ্ন ঘটল "এই দুইডারে চৌরাস্তায় ফেইল্লা গুল্লি কইরা মারন উচিত এগর মরণ না হইলে এই জীবনে আর শান্তি আইবনা " বুঝলাম 'ঐ দুইজনের' বাকি একজনই কিছু একটা সাধন করেছেন আজ জানতে পারলাম তিনি কিছু জিতেন নি কা'বা শরীফে গিয়ে দেশের মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করে দেশে ফিরেছেন

কয়েকবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত আবার হবেন মাঝে মাঝেই ওমরাহ্‌ করতে চলে যান সউদি আরব এবার ওমরাহ্‌ করে ফিরলেন ১৩ দিন পর তাকে এক নজর দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ তাই বিমান বন্দরে গিয়ে বসে আছে দুই সপ্তাহ তাকে দেখেনি !

এত্তো মানুষ যাকে ভালোবাসেন আমাদের মতো নগন্য মানুষদের কথা ভাবার তার সময় কই !




মাঝে মাঝে নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হয় আজও একবার মনে হলো মনটা বেশ খারাপ হলো আবার আমার পড়াশোনা, চিন্তা ভাবনা, স্বপ্ন, কাজ কর্মের এ দেশে কোনো দাম নেই জানি সময়ের দাম তো আশা করারই সাহস পাইনি তাই বলে কোনো রকমে একটু বেঁচেও থাকতে পারবো না? অফিসে পৌছলাম এক ঘন্টা দেরিতে বস চাইলে বকা দিতে পারতেন
বকেন নি বেতন কাটবেন হয়তো

আমার দেড় ঘন্টা পরে দুই নেত্রীকে গালি দিতে দিতে অফিসে ঢুকলেন মাকসুদ ভাই মার্কিন দুতাবাসের সামনে থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেইট পর্যন্ত আসতে বেচারার দুই ঘন্টা সময় লেগেছে তীব্র যানজটের মধ্যে একবার রাস্তার মধ্যে গাড়ি রেখে চা সিগারেটও খেয়ে এসেছেন এই রাস্তায় গাড়ি চুরি করবে সে সাহস কার? তাহলে গাড়িতে পাখা লাগাতে হবে যে আড়াই ঘন্টা পরে হলেও অফিসে পৌছতে পেরেছেন তাতেই আপাতত খুশি তিনি

মাকসুদ ভাই আসার পর জাহাঙ্গীর ভাই, শাহীন ভাই, আমিনুল ভাই আর মুকিত ভাই মিলে ক্যান্টিনে চলে গেলাম সবাই মিলে দুই নেত্রীর গোষ্ঠী উদ্ধার করলাম মনটা একটু ভালো হলো ঘরে নিজেদের ক্ষমতা দেখে ভালই লাগলো

রাতে জানতে পারলাম আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অর্থাৎ খালেদা জিয়ার রিসেপশনের কারণে সাড়ে চার ঘন্টা বন্ধ ছিল এয়ারপোর্ট সড়ক বনানি থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছিল বিএনপি নেতা কর্মীদের দখলে

পরদিন মনটা আবার খারাপ হলো কারণ আমি যে দুটি পত্রিকা বাসায় রাখি তার একটাতেও আমাদের কষ্টের এক লাইন বর্ণনা নাই জানি মন খারাপ করাটা উচিত হয়নি, কারণ এমন ঘটনা এদেশে প্রায়ই ঘটে তবুও মন খারাপ হলো তবে আমার পত্রিকা 'ডেইলি সান' এ অবশ্য সংবাদটা ছাপা হলো প্রথম পাতায়





গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশন শেষে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা দেয়ার জন্য রাতের বেলা রাস্তা বন্ধ করে প্লাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন হাতে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে হাজার হাজার নেতা-কর্মী আর লাখ লাখ সাধারণ মানুষ রাস্তায় বসে ট্রাফিক সিগনাল দেখছে পুলিশের কিছু করার নাই

সাংবাদিকেরা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুল আলম হানিফ উল্টো নেতা কর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করলেন

গত বছর ভারত থেকে ফেরার সময় হাসিনাকে দেয়া সম্বর্ধনার কথা ঢাকার রাস্তায় যারা চলাফেরা করেন তাদের বহু দিন মনে থাকার কথা ২০০৮ সালের ৬ই নভেম্বর অর্থাৎ কেয়ারটেকার সরকারের সময়েও হাসিনাকে এরকম এক সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিল

ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের জন্য অনেক রকমের পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলে থাকেন হাসিনা খালেদা দুজনই কখনো বাস টার্মিনালগুলো স্থানান্তরের কথা বলেন, কখনো বলেন ই-টিকেটিং চালু করবেন, কখনো বলেন পার্কিং নীতি করবেন মেট্রো রেইল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আওয়াজতো এখন গণমাধ্যমে বেশ শোনা যাচ্ছে

তবে ওনাদের যাতায়াতের কারণেও যে জনগণের প্রচুর দুর্ভোগ হচ্ছে তা নিয়ে উনারা কখনো কিছু বলেছে বলে শুনিনি আমার এক সহকর্মী এক সময় ফরেন সার্ভিসে ছিলেন চাকরির সুবাধে বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন ওনার কাছে শুনলাম ইউরোপ আমেরিকায় নাকি প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের জন্য রাস্তা বন্ধ করা হয়না অবশ্য, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীরাতো তাদের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ !

এই ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখের খবর রোবার স্কাউটের ক্যাম্প উদ্বোধন করতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী, সে জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক দুই ঘন্টা বন্ধ রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দুপুর ১২ টায় আর প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী বহর গেছে ২টায় দুপুরের কড়া রোদে রাস্তায় পুড়ছে হাজার হাজার গাড়ী আর তার যাত্রীরা মানুষের দুর্ভোগের কথা নাই বললাম প্রধানমন্ত্রী কোথাও যাচ্ছেন তাই রাস্তা ঘাট বন্ধ ঢাকা শহরে এমন দৃশ্য প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়




বুয়েটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, পিক আওয়ারে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘন্টায় ১২,৫০০ গাড়ী চলাচল করে

২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চার বছর সময়ে প্রায় ৮৪,০০০ প্রাইভেট কারের রেজিস্ট্রেশন করেছে বিআরটিএ এই সময়ে ঢাকার রাস্তায় পাবলিক বাস নেমেছে মাত্র ৪৮৩২

বিদেশিরা আমাদের দেশে ব্যাবসা করতে চায়না এই যানজটের কারণে


ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক এস এম সালেহ উদ্দিন ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে এক সেমিনারে বলেছিলেন যানজটের কারণে শুধু ঢাকা শহরে ১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয় আমাদের সময়ের দাম, মানুষের জীবনের দাম আর পরিবেশের যে ক্ষতি হয় সে হিসাব না হয় নাই করলাম

যানজট নিয়ে বড় অফিসারদের জিজ্ঞেস করলে কখনোই ‘ভিআইপি’দের যাতায়াত কারণ হিসেবে আসেনা তবে বিভিন্ন সভা সেমিনারে অনেক কারণ নিয়ে আলোচনা হয় যেমন সুয়ারেজ লাইন মেরামত, ত্রুটিপূর্ণ ব্যাবস্থাপনা, দুর্বল অবকাঠামো, ফুটপাথ দখল এবং ট্রাফিক পুলিশদের দুর্ণীতি সবচেয়ে বড় কারণ আইনের প্রতি আমাদের অশ্রদ্ধা


অবকাঠামো উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয় কিন্তু উন্নয়ন হয়না শুনেছি এই টাকার একটা বড় অংশ পায় যারা প্রধানমন্ত্রীদের অভ্যর্থনা দিতে বিমান বন্দর যান আবার করও ফাকি দেন ঐ অভ্যর্থনা প্রদানকারিরাই আর আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা? সেটা কারা করেন? মোটামুটি সবাই শ্রদ্ধা আসবে কোত্থেকে? আইন ও তো বানান ঐ অভ্যর্থনা প্রদানকারিরাই রাস্তা ঘাটে আইন ভেঙ্গে রাস্তা অবরোধ আর গাড়ী ভাংচুর করার রেকর্ড ও তাদেরই বেশি


ক্যান্টিনে কথা বলতে বলতে এক সময় শাহীন ভাই জিজ্ঞেস করলেন ‘এ সমস্যার সমাধান কি?’

আসলেইতো ! এ সমস্যার সমাধান কি? এ প্রশ্ন আমার, জাহাঙ্গীর ভাই, শাহীন ভাই, আমিনুল ভাই আর মুকিত ভাই--- সবার

ওরা আসলে সংখায় কয়জন? আমরা যারা এর শেষ চাই তাদের চেয়ে নিশ্চয় বেশি নয় এদের কবল থেকে কি আমরা কখনোই মুক্তি পাবনা? বর্তমান সরকারের আগে তো একটা সরকার দেশ প্রায় দুই বছর চালিয়েছিল তাদের ও তো মানুষ মেনে নেয়নি ভোট দিয়ে আবার এদেরই নিয়ে এসেছি সংসদে

আসলে আমাদের সবার মনেরই কোথাও কোথাও না কোথাও খালেদা হাসিনা বাস করছে আমাদের সব কিছুর দায়িত্ব যেন আমরা ওনাদের দিয়ে দিয়েছি

ডেইলি সানের সিনিয়র সহ-সম্পাদক মাকসুদ ইবনা রহমান বললেন “Just start saying ‘no’ to these two persons and their parties” মাকসুদ ভায়ের ধারণা সবাই মিলে এই দুই দলকে বর্জন করতে পারলে স্বাভাবিক ভাবেই নতুন নেতৃত্ব আসবে এবং রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে


তবে আমার আরেক সহকর্মী ফরহাদুল ইসলামের মতামতটা আরও বেশি বাস্তব সম্মত মনে হচ্ছে উনি বিশ্বাস করেন না যে সবাই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি কে বর্জন করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এ দেশের ইতিহাস এই বক্তব্য সমর্থন করে না

তার মতে, নেতারাই দেশের মানুষের প্রতিচ্ছবি

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ফরহাদ ভাইয়ের মতে একটা দেশের সাধারণ মানুষরা নাকি তাদের নেতাদের মতই অর্থাৎ হাসিনা-খালেদা আমাদেরই এক প্রতিচ্ছবি আর আমরা আমাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখেই বিরক্ত হই, ঘৃনা লাগে, কষ্ট পাই

আমার আরেক সহকর্মী ফরহাদ ভাইয়ের কথাটা আরো সহজ করে দিলেন তিনি বললেন, আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের নেতা নেত্রীদের যেসব কর্মকান্ডের সমালোচনা করি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমরা সবাই ঐসব কাজ করি সুতরাং এই অবস্থার পরিবর্তন চাইলে আমাদের নিজেদেরকে সচেতন এবং সজাগ হতে হবে

মাকসুদ ভাই বললেন, "মাছের মাথা পঁচে আগে, তারপর বাকী অংশ " আমাদের দেশের মাথা ইতোমধ্যে পঁচে গেছে সুতরাং দেশটাকে বাঁচাতে হলে লেজ আর বাকি দেহকে যেকোনো মূল্যে বাঁচাতে হবে
If you like this article , please spread it by bookmarking

  • Stumbleupon
    Stumble
  • Digg
    Digg
  • Delicious
    Delicious
  • More
    More

4 comments:

নামহীন বলেছেন...

তোমার লেখাটি বেশ ভালো হয়েছে। আমারও ঐ দিনের কথা মনে পড়ছে।

৬ এপ্রিল, ২০১১ এ ৯:৫০ PM
Unknown বলেছেন...

sundor vai... jodio traffic er kobole porina onekdin.. tobe jara poren ,tader kostota feel korte pari.

১১ এপ্রিল, ২০১১ এ ২:৪২ AM
Unknown বলেছেন...
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
Unknown বলেছেন...

Your Bangla has improved incredibly..carry on...

১২ এপ্রিল, ২০১১ এ ২:৫৭ PM

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন